রাশি ও রাশির মাত্রা

মনেকরো একটা মহাকাশযান এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে ছুটে বেড়াচ্ছে। তুমি একটা বিরাট দূরবীন দিয়ে অনেক্ষন ধরে ওটাকে লক্ষ্য করলে। এখন তোমাদেরকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, মহাকাশযানটা কত জোরে ছুটছে? একগ্রহ থেকে আরেক গ্রহে যেতেই বা ওই স্পেসশিপটার কতটুকু সময় লাগছে? স্পেসশিপের ভেতর ইঞ্জিনের তাপমাত্রা কেমন? পৃথিবী থেকে যদি মঙ্গলগ্রহে স্পেসশিপটাকে পাঠাতে চাই, তাহলে কতটুকু জ্বালানী দরকার হবে?

এই জিনিষগুলি পরিমাপ করতে আমরা ব্যবহার করি রাশি। যেমন সময় পরিমাপ করার জন্য ঘন্টা/ মিনিট/ সেকেন্ড, ইঞ্জিনের তাপমাত্রা পরিমাপ করার জন্য ফারেনহাইট/ সেলসিয়াস, দূরত্ব পরিমাপ করার জন্য মাইল/ কিলোমিটার ব্যবহার করি।

রাশির একক কিভাবে আসলো?

অনেক অনেক আগে মানুষ আকাশে সূর্য আর চাঁদের অবস্থান দেখে সময়ের ধারনা পেতো। কোন কিছুর দৈর্ঘ্য মাপার জন্য লাঠি, দড়ি বা হাত ব্যবহার করতো। কিন্তু এগুলি দিয়ে কোন কিছু সূক্ষ্মভাবে হিসেব করতে গেলেই ঝামেলা বেধে যেতো। তাই বিজ্ঞানীরা অনেক ভেবেটেবে বললেন, এভাবে তো চলবেনা বাপু। সব কিছুর নির্দিষ্ট একটা একক থাকা দরকার। আঠারো শতকের শেষের দিকে ফ্রান্সের একদল বিজ্ঞানী বললেন আমরা, দূরত্ব মাপবো মিটার দিয়ে, ভর মাপবো কিলোগ্রাম দিয়ে । কিন্তু দেখা গেলো আরেকদেশের মানুষ দূরত্ব মাপছে সেন্টিমিটার দিয়ে, ভর মাপছে গ্রাম দিয়ে, আবার অন্য আরেকটা দেশের লোকজন দূরত্ব মাপছে ফুট দিয়ে আর ভর মাপছে পাউন্ড দিয়ে। ১৭৯৫ থেকে ১৮৭৫ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে পরিমাপের যে এককগুলি ছিলো সেগুলিকে আমর মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করে ফেলতে পারি-
  • ১) এফ.পি.এস পদ্ধতি F.P.S.অর্থাৎ Foot, PoundSecond কে একক ধরে পরিমাপের পদ্ধতি
  • ২) সি.জি.এস পদ্ধতি C.G.S বা Centimeter, Gram এবং Second এ পরিমাপের পদ্ধতি
  • ৩) এবং এম.কে.এস পদ্ধতি M.K.S অথবা Meter, Kilogram আর Second এককে পরিমাপের পদ্ধতি
এই তিন ধরনের একক থাকায় বিজ্ঞানীরা পরে গেলেন মহা মুশকিলে। মনেকরো, দুই দেশের বিজ্ঞানীরা মিলে মহাকাশে রকেট পাঠাবে ঠিক করেছে। একদেশের এক বিজ্ঞানী কতদূর গিয়ে কত ডিগ্রি কোণে রকেট ঘোরাতে হবে সেটা kilometer এ হিসেব-টিসেব করে একক লিখতে ভুলে গেছে। আরেক দেশের আরেক বিজ্ঞানী সেটিকে mile এ হিসেব করা ফলাফল ভেবে রকেটের গতিপথ নির্ধারণ করায় সেটা মঙ্গলগ্রহের বদলে বুধগ্রহে গিয়ে হাজির হয়েছে।

এসমস্যা থেকে মুক্তির জন্য ১৮৭৫ সালে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা সমাবেশ ডেকে সিদ্ধান্ত নিলেন আমরা এখন থেকে হিসেবের জন্য এক একটা মৌলিক রাশির জন্য নির্দিষ্ট একটি একক ব্যবহার করবো। এবং সেজন্য তারা M.K.S পদ্ধতিকে বেছে নিলেন। মৌলিক রাশির এই এককগুলিই পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক একক ( SI Unit ) হিসাবে স্বীকৃতি পায়। এগুলি হলো-
রাশির নাম একক মাত্রা*
দৈর্ঘ্য মিটার (\(m\)) [L]
ভর কিলোগ্রাম (\(kg\)) [M]
সময় সেকেন্ড (\(s\)) [T]
পদার্থের পরিমান মোল(\(mol\)) [n]
তাপমাত্রা কেলভিন(\(K\)) [\(\Theta\)]
তড়িৎ প্রবাহ অ্যাম্পিয়ার (\(A\)) [I]
দীপন ক্ষমতা ক্যান্ডেলা (\(cd\)) [K]
দৈর্ঘ্যঃ বায়ুশূন্য স্থানে $\dfrac{1}{299792458}$ সেকেন্ডে আলো যতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে সেটি হচ্ছে এক মিটার।
ভরঃ শক্তির একক joul কে কিলোগ্রাম, মিটার ও সেকেন্ডের মাধ্যমে( $J = kg⋅m^2⋅s^−2$) লেখা যায়। প্ল্যাঙ্কের কন্সটান্টের মান ঠিক $6.62607015\times10^−34 J⋅s$ ধরে সেখান থেকে এক কিলোগ্রামের পরিমান বের করা হয়।
সেকেন্ডঃ caesium-133 পরমানুর ground স্টেট-এ দুইটি hyperfine লেভেলের transition এর ফলে যে রেডিয়েশন ঘটে এবং এর 9192631770 periods ঘটার জন্য যতটুকু সময় লাগে তাকে এক সেকেন্ড বলে।
মোলঃ $6.02214076\times10^23$ মৌলিক entities এর মধ্যে ঠিক যেটুকু substance থাকে, তাকে এক মোল ধরা হয়। মৌলিক entities এর এই সংখ্যাটি অ্যাভোগ্রেডোর ধ্রুবক $N_A$ থেকে নির্ণয় করা হয়।
কেলভিনঃ বোল্টজম্যানের ধ্রুবক k এর মান 1.380649×10−23 J⋅K−1, (J = kg⋅m2⋅s−2) ধরে সেখান থেকে তাপমাত্রার একক কেলভিনের মান হিসেব করা হয়।
অ্যাম্পেয়ারঃ এক সেকেন্ডে মৌলিক চার্জকণা $e/1.602176634×10−19$ এর যতটুকু পরিবাহিত হয় তাকে এক অ্যাম্পেয়ার বলা হয়।
ক্যান্ডেলাঃ একটি নির্দিষ্ট দিকে 5.4×1014 Hz কম্পাঙের একটি একরঙা আলোক সোর্সের উজ্জ্বলতা যার intensity 1/683 watt per steradian, তাকে এক ক্যান্ডেলা বলে।

রাশির মাত্রা কি জিনিস?

রাশি ও রাশির মাত্রা রাশি ও রাশির মাত্রা Reviewed by Dayeen on মে ২২, ২০২১ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.