ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্সের শুরুর কথা

ধরো তুমি তোমার প্রিয় বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছো, সে একটি গাড়িতে আছে এবং সে তোমাকে জানালো যে কোথায় আছে এবং গাড়িটি কত জোরে ছুটছে। তুমি চট করে হিসাব করে ফেলতে পারবে সে কখন আসবে। অথবা মনে করো তুমি একজন পাকা বাস্কেটবল প্লেয়ার, তুমি জানো কতটুকু দূরে থেকে এবং কত কোণে বলটি নিক্ষেপ করলে বলটি বাস্কেটে পৌছবে। জানো কি, যখন তুমি হিসাবগুলো করছ, তখন মনের অজান্তেই ক্লাসিকাল মেকানিক্স ব্যবহার করে ফেলছো?

ক্লাসিকাল মেকানিক্স, এই শব্দটা শুনলেই চট করে যার নাম মাথায় আসে তিনি হলেন বিজ্ঞানী আইজাক নিউটন। নিউটনের নামানুযায়ী এটাকে নিউটনিয়ান মেকানিক্সও বলা হয়। যেকোনো ধরনের Macroscopic বস্তু, মহাজাগতিক বস্তু (যেমন মনে করো গ্রহ, নক্ষত্র, মহাকাশযান) এইসব ক্ষেত্রে এদের গতিবিধি ক্লাসিকাল মেকানিক্সের মাধ্যমে সম্পূর্ন নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। এখন প্রশ্ন করতে পারো, ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্সটা তাহলে কী? আর যদি এসব নিউটনিয়ান মেকানিক্স দিয়েই হিসেব করা যায় তাহলে ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্স শেখার কি দরকার?

নিউটনের সূত্রগুলি অনেক কিছু সহজে ব্যাখ্যা করতে পারলেও পদার্থবিজ্ঞানীরা দেখলেন যে কিছু কিছু বস্তুর গতিবিধি (যেমনঃ জটিল পেন্ডুলাম) ইংরেজিতে বলা হয় Compound pendulum। নিউটনের সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করতে গেলে পাতার পর পাতা হিসেব কষা লাগছে। তখন তাঁরা ভাবতে শুরু করলেন - আহা! যদি এর থেকে সহজে একটু গতিবিধিগুলি হিসেব করা যেত, কতইনা ভালো হতো! আঠারোশো ও উনিশশো শতকের দিকে বিজ্ঞানী জোসেফ লুই ল্যাগ্রাঞ্জ এবং উইলিয়াম রোয়ান হ্যামিল্টন ক্লাসিকাল মেকানিক্সের রিফর্মুলেশনের মাধ্যমে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসেন। এই বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে abstract পদ্ধতির প্রবর্তন করেন, যার নাম দেয়া হয় ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্স বা হ্যামিল্টনিয়ান মেকানিক্স। Analytical dynamics -এর মূল ভিত্তিই হচ্ছে এই ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান প্রিন্সিপাল। ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্স এর মূলতত্ত্বকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় কাজে লাগানো যায়।

নিউটনিয়ান ও ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্সের পার্থক্য

ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্স নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করার আগে এসো আমরা দেখে নেই এই ক্লাসিকাল মেকানিক্স এবং ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্স এর পার্থক্যগুলো কোথায়। নিউটনিয়ান মেকানিক্সে মূলত কার্তেসিয়ান স্থানাঙ্ক ব্যাবস্থায় ইংরেজিতে লিখা হয় Cartesian co-ordinate system। একে অনেক সময় Rectangular co-ordinate system ও বলা হয়। constraint বল ব্যবহার করে বস্তুর গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করা হয়। কিন্তু ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্স এর ক্ষেত্রে এইসব constraint বল ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই এবং শুধুমাত্র কার্তেসিয়ান স্থানাঙ্কের পরিবর্তে সার্বজনীন স্থানাঙ্ক ইংরেজিতে একে Generalized co-ordinate system বলে। ব্যবহার করা হয়। তার মানে হচ্ছে এখন আমরা কোণ, রেডিয়াল দূরত্ব, ভরবেগ, শক্তি ইত্যাদি এই সার্বজনীন স্থানাঙ্কের এর মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারবো।

বিষয়গুলি কি একটু ধোঁয়াশা লাগছে? চিন্তা করার একদমই কিছু নাই, পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে এগুলির উদাহরণসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্সের শুরুর কথা ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্সের শুরুর কথা Reviewed by Dayeen on মে ১৭, ২০২০ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.