ধরো তোমার কাছে একটি টর্চ লাইট আছে। লাইটটিকে একটি ধাতবপাতের উপর ফেললে। তাহলে একটা মজার বিষয় ঘটবে। ওই ধাতবপাত থেকে ইলেকট্রন নির্গত হবে। খালি চোখে হয়তো দেখতে পাবেনা, তবে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বসিয়ে সেই একশ বছর আগেই পরীক্ষা করে দেখেছেন। মনেকরো, বায়ুশূন্য স্থানে ধাতব পাতটি রাখলে,সেটিকে আরেকটি ধাতবপাতের সাথে তার দিয়ে যুক্ত করলে। এবং এদের মাঝখানে একটি ভোল্টেজ সাপ্লায়ার যোগ করে দিলে। ভোল্টেজ সাপ্লায়ার কে নেড়েচেড়ে এমনভাবে রাখলে যেন টর্চলাইটের আলোতে নির্গত ইলেকট্রন অন্য ধাতবপাতে পৌছাতে না পারে। যে ভোল্টেজের জন্য ইলেকট্রনগুলি এই বাঁধার সম্মুখীন হবে, সেটিকে আমরা বলবো Stopping voltage (\(V_{\text{stop}}\))। এবার তোমাকে একটা প্রশ্ন করি। যদি আলোর উজ্জ্বলতা বাড়ানো হয়, তাহলে কি হবে? ইলেট্রনগুলি কি পারবে \(V_{\text{stop}}\) এর বাঁধা অতিক্রম করে অন্য ধাতবপাতে পৌঁছাতে?
ক্লাসিকাল বিদ্যুত ও চুম্বক তত্ত্ব অনুযায়ী, আলো একটি বিদ্যুতচৌম্বকীয় তরঙ্গ। আর কোন বিদ্যুতচৌম্বকীয় তরঙ্গের তীব্রতা বাড়ালে সেটির বিদ্যুতক্ষেত্রের শক্তিও বাড়বে। এবং ওই বিদ্যুতক্ষেত্রে অবস্থিত ইলেকট্রনগুলির শক্তিও বৃদ্ধি পাবে। এবং ওই ধাতবপাত থেকে অন্য ধাতবপাতে ইলেকট্রনগুলির প্রবাহ বাঁধা দিতে \(V_{\text{stop}}\) কে বাড়াতে হবে। কিন্তু কোন একটা অদ্ভুত কারণে \(V_{\text{stop}}\) এর পরিমানের কোন পরিবর্তন হয়না!
আচ্ছা, এবার আলোর তীব্রতা আগের মতই রেখে বরং বেশি কম্পাঙ্কের আলো ব্যবহার করলে। ক্লাসিকাল বিদ্যুত ও চুম্বক তত্ত্ব বলবে, বিদ্যুতচৌম্বকীয় তরঙ্গের কম্পাঙ্ক বাড়ালে বিদ্যুতক্ষেত্রের শক্তির কোন পরিবর্তন হয়না। সুতরাং ইলেকট্রনের প্রবাহ থামানোর জন্য \(V_{\text{stop}}\) এর মান বাড়ানোর কোন দরকার নাই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, \(V_{\text{stop}}\) এর মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক্লাসিকাল বিদ্যুত ও চুম্বক তত্ত্ব দিয়ে কোনভাবেই আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার এই অদ্ভুত কার্যক্রম ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিলো না।
এবার দেখা যাক কোয়ান্টাম মেকানিক্স কিভাবে এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়। সাধারণভাবে আলো বলতে বোঝায় ফোটনের বিচ্ছুরণ। এই ফোটন গুলি কণার মতো আচরণ করে। তাদের শক্তিকে লেখা যায়- $$E=h\nu=\hbar \omega$$ এখানে $\nu$ হচ্ছে কম্পাঙ্ক আর $\omega=2\pi\nu$ হচ্ছে ঘূর্ণিকম্পাঙ্ক। তবে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে সাধারণভাবে $\nu$ খুব বেশি ব্যবহার করা হয়না, কম্পাঙ্ক বলতে $\omega$ কেই বোঝানো হয়ে থাকে।
আবার, ভরবেগ হচ্ছে $p=h/\lambda=\hbar k$, এখানে $\lambda$ হচ্ছে তরঙ্গদৈর্ঘ্য আর $k=2\pi/\lambda$ হচ্ছে তরঙ্গসংখ্যা।
বিদ্যুতচুম্বক তরঙ্গের ক্ষেত্রে গতি $c=\omega/k=\nu\lambda$। আমরা জানি যে ফোটনের কোন ভর নেই। এবং এই সমীকরণটিও তাই বলে। এখান থেকে তোমরা লিখতে পারো- $$E=cp$$ যেটা থেকে আবার স্পেশাল রিলেটিভিটির সমীকরণ বের করে ফেলতে পারবে (সেটা পরে এক সময়ে আলোচনা করা হবে।)
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, "কোয়ান্টা"'র ধারনা সর্বপ্রথম নিয়ে আসেন প্ল্যাঙ্ক। সে সময়ে ক্লাসিকাল মেকানিক্স দিয়ে কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেখেন হিসেব মিলছে না। কিন্তু কোয়ান্টার ধারণা দিয়ে কৃষ্ণবস্তুর বর্ণালী হিসেব করলে সেটা পরীক্ষার ফলাফলের সাথে ভালোভাবে মিলে যাচ্ছে। তবে সেসময়ে কেউই নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারেনি, আসলেই কি কোয়ান্টার অস্তিত্ব আছে? নাকি এটা শুধুই তাত্ত্বিক একটা ধারনা!
ক্লাসিকাল মেকানিক্সের সাহায্যে এটা ব্যাখ্যা করা প্রায় অসম্ভব। যদি একটি ইলেক্ট্রন নির্গত হতে প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমান হয় $W$, তাহলে শক্তির নিত্যতা অনুযায়ী গতিশক্তির পরিমান হবে- $K=\hbar\omega-W$। অর্থাৎ যদি $\omega < \omega_0$ হয়, (এখানে $\omega_0=W/\hbar$) তাহলে কোন ইলেক্ট্রনই নির্গত হবেনা।
আইনস্টাইন প্রথমবার এই আলোকতড়িৎক্রিয়াকে কোয়ান্টার সাহায্যে ব্যাখ্যা করে প্রমান করেন এটি শুধুই তাত্ত্বিক ধারনা নয়। এবং এজন্য পরবর্তীতে তিনি নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
ক্লাসিকাল বিদ্যুত ও চুম্বক তত্ত্ব অনুযায়ী, আলো একটি বিদ্যুতচৌম্বকীয় তরঙ্গ। আর কোন বিদ্যুতচৌম্বকীয় তরঙ্গের তীব্রতা বাড়ালে সেটির বিদ্যুতক্ষেত্রের শক্তিও বাড়বে। এবং ওই বিদ্যুতক্ষেত্রে অবস্থিত ইলেকট্রনগুলির শক্তিও বৃদ্ধি পাবে। এবং ওই ধাতবপাত থেকে অন্য ধাতবপাতে ইলেকট্রনগুলির প্রবাহ বাঁধা দিতে \(V_{\text{stop}}\) কে বাড়াতে হবে। কিন্তু কোন একটা অদ্ভুত কারণে \(V_{\text{stop}}\) এর পরিমানের কোন পরিবর্তন হয়না!
আচ্ছা, এবার আলোর তীব্রতা আগের মতই রেখে বরং বেশি কম্পাঙ্কের আলো ব্যবহার করলে। ক্লাসিকাল বিদ্যুত ও চুম্বক তত্ত্ব বলবে, বিদ্যুতচৌম্বকীয় তরঙ্গের কম্পাঙ্ক বাড়ালে বিদ্যুতক্ষেত্রের শক্তির কোন পরিবর্তন হয়না। সুতরাং ইলেকট্রনের প্রবাহ থামানোর জন্য \(V_{\text{stop}}\) এর মান বাড়ানোর কোন দরকার নাই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, \(V_{\text{stop}}\) এর মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক্লাসিকাল বিদ্যুত ও চুম্বক তত্ত্ব দিয়ে কোনভাবেই আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার এই অদ্ভুত কার্যক্রম ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিলো না।
এবার দেখা যাক কোয়ান্টাম মেকানিক্স কিভাবে এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়। সাধারণভাবে আলো বলতে বোঝায় ফোটনের বিচ্ছুরণ। এই ফোটন গুলি কণার মতো আচরণ করে। তাদের শক্তিকে লেখা যায়- $$E=h\nu=\hbar \omega$$ এখানে $\nu$ হচ্ছে কম্পাঙ্ক আর $\omega=2\pi\nu$ হচ্ছে ঘূর্ণিকম্পাঙ্ক। তবে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে সাধারণভাবে $\nu$ খুব বেশি ব্যবহার করা হয়না, কম্পাঙ্ক বলতে $\omega$ কেই বোঝানো হয়ে থাকে।
আবার, ভরবেগ হচ্ছে $p=h/\lambda=\hbar k$, এখানে $\lambda$ হচ্ছে তরঙ্গদৈর্ঘ্য আর $k=2\pi/\lambda$ হচ্ছে তরঙ্গসংখ্যা।
বিদ্যুতচুম্বক তরঙ্গের ক্ষেত্রে গতি $c=\omega/k=\nu\lambda$। আমরা জানি যে ফোটনের কোন ভর নেই। এবং এই সমীকরণটিও তাই বলে। এখান থেকে তোমরা লিখতে পারো- $$E=cp$$ যেটা থেকে আবার স্পেশাল রিলেটিভিটির সমীকরণ বের করে ফেলতে পারবে (সেটা পরে এক সময়ে আলোচনা করা হবে।)
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, "কোয়ান্টা"'র ধারনা সর্বপ্রথম নিয়ে আসেন প্ল্যাঙ্ক। সে সময়ে ক্লাসিকাল মেকানিক্স দিয়ে কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেখেন হিসেব মিলছে না। কিন্তু কোয়ান্টার ধারণা দিয়ে কৃষ্ণবস্তুর বর্ণালী হিসেব করলে সেটা পরীক্ষার ফলাফলের সাথে ভালোভাবে মিলে যাচ্ছে। তবে সেসময়ে কেউই নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারেনি, আসলেই কি কোয়ান্টার অস্তিত্ব আছে? নাকি এটা শুধুই তাত্ত্বিক একটা ধারনা!
ক্লাসিকাল মেকানিক্সের সাহায্যে এটা ব্যাখ্যা করা প্রায় অসম্ভব। যদি একটি ইলেক্ট্রন নির্গত হতে প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমান হয় $W$, তাহলে শক্তির নিত্যতা অনুযায়ী গতিশক্তির পরিমান হবে- $K=\hbar\omega-W$। অর্থাৎ যদি $\omega < \omega_0$ হয়, (এখানে $\omega_0=W/\hbar$) তাহলে কোন ইলেক্ট্রনই নির্গত হবেনা।
আইনস্টাইন প্রথমবার এই আলোকতড়িৎক্রিয়াকে কোয়ান্টার সাহায্যে ব্যাখ্যা করে প্রমান করেন এটি শুধুই তাত্ত্বিক ধারনা নয়। এবং এজন্য পরবর্তীতে তিনি নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
আলোকতড়িৎ ক্রিয়ার অদ্ভুত আচরণ ও আইনস্টাইনের সমাধান
Reviewed by Dayeen
on
এপ্রিল ০৫, ২০২০
Rating: